শিং মাছের রোগ ও প্রতিকার
শিং মাছ চাষ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে। তবে এই মাছ চাষে ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ একটি বড় সমস্যা। আসুন জেনে নিই শিং মাছের ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
শিং মাছের ব্যাকটেরিয়া রোগের সমস্যা
মাছ চাষ বাংলাদেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশেষ করে শিং মাছ চাষ আজকাল বেশ লাভজনক একটি পেশায় পরিণত হয়েছে। তবে মাছ চাষে ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ বড় একটি সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শিং মাছের ব্যাকটেরিয়া রোগের লক্ষণসমূহ
১. খাদ্য গ্রহণে অনিচ্ছুক হয়ে পড়া
২. শরীরের ভারসাম্যহীনতা এবং ঝাঁকুনি দেওয়া
৩. শরীরের রঙ সাদা হয়ে আসা এবং পঁচন ধরা শুরু করা
৪. শরীরের শ্লেষ্মার পরিমাণ ক্রমশ কমে আসা
৫. ২-৭ দিনের মধ্যে ব্যাপক হারে মৃত্যু ঘটতে থাকে
ব্যাকটেরিয়া রোগের প্রতিকার
১. প্রাথমিক প্রতিকার হিসাবে প্রতি শতক পুকুরে ৩০০-৫০০ গ্রাম চুন এবং লবণ প্রয়োগ করতে হবে। এটি পুকুরের পানির গুণগত মান বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
২. পরবর্তীতে প্রতি শতক ৩ ফুট গভীর পুকুরে ৫-৭ গ্রাম হারে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন এন্টিবায়োটিক ওষুধ ৩-৪ দিন ধরে প্রয়োগ করতে হবে। এটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর।
৩. এছাড়া, প্রতি কেজি খাবারের সাথে ১-২ গ্রাম সিপ্রোফ্লোক্সাসিন মিশিয়ে মাছদের ৫-৭ দিন খাওয়ানো যেতে পারে।
৪. যদি প্রয়োজন হয়, পুকুরের পানি পরিবর্তন করে নতুন পানি ঢেলে দিতে হবে। একইসাথে মাছের ঘনত্ব কমিয়ে সঠিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা উচিত।
৫. পুকুরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার প্রদান করা মাছের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিং মাছের প্রধান রোগগুলির বিস্তারিত
সুর খোসা পড়া রোগ (ব্যাকটেরিয়া জনিত):
লক্ষণ: মাছের পিঠে সুর নামক অঙ্গটি খসে পড়তে থাকে। ফলে মাছ পানিতে সামান্য ভেসে থাকে এবং চলাচল করতে অসুবিধা হয়। লক্ষণীয় যে, সুর হচ্ছে মাছের চলাচলের প্রধান শক্তি।
প্রতিকার: প্রতি কাঠা জলের জন্য ২ কেজি হারে চুন গুলে পুকুরের পানিতে প্রয়োগ করে মাটির নিচের স্তর ঘষে দিতে হবে। এরপর আক্রান্ত মাছগুলোকে তুঁতের জলীয় দ্রবণে (১ লিটার জলে ৫০-১০০ গ্রাম তুঁত গুলে) ১-২ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। এটি রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে সাহায্য করবে।
পাখনা পচা রোগ (ব্যাকটেরিয়া জনিত):
লক্ষণ: এ রোগে আক্রান্ত হলে মাছের পাখনাগুলো পচে ভেঙে যায় বা খসে পড়ে যায়।
প্রতিকার: এরও প্রতিকার উপায় সুর খোসা রোগের মতোই। অর্থাৎ চুন প্রয়োগ এবং তুঁতের জলীয় দ্রবণে আক্রান্ত মাছগুলোকে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
পেট ফোলা রোগ (ব্যাকটেরিয়া জনিত): লক্ষণ:
এ রোগে আক্রান্ত হলে মাছের পেট ফুলে উঠে বা ফেঁপে যায়। প্রতিকার: প্রতি কাঠা পুকুরে সময় মতো চুন ছিটিয়ে মাটি ঘষে দিতে হবে। এছাড়াও প্রতি ১০ লিটার জলে ২০-২৫ গ্রাম পটাসিয়াম পারমাঙ্গানেট গুলে আক্রান্ত মাছগুলোকে সেই দ্রবণে ২-৩ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। অন্যদিকে, খাদ্যের সাথে প্রতি ২০ কেজি খাদ্যে ১ কেজি নিম খিল ও ৫০ গ্রাম হলুদগুঁড়া মিশিয়ে খাওয়ানো উচিত।
সাদা গুটি/বসন্ত রোগ (পরজীবী জনিত):
লক্ষণ: এ রোগে আক্রান্ত হলে মাছের গায়ে লালচে গুঁড়ি আকারের দাগ দেখা যায়। এগুলো সাদা থেকে হালকা বাদামী রঙের হয়।
প্রতিকার: প্রতি কাঠা পুকুরে চুন ছিটিয়ে মাটি ঘষে দিতে হবে। এছাড়াও প্রতি লিটার জলে ১৫-২০ গ্রাম খাবার লবণ গুলে সেই দ্রবণে আক্রান্ত মাছগুলোকে ১-২ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে। এভাবে ১০ দিন পর আবার একইভাবে করতে হবে।
ক্ষয়/ইউএস রোগ (ভাইরাস জনিত):
লক্ষণ: এই রোগের কোন লক্ষণ দেখা না গেলেও মাছের খাদ্যগ্রহণ ক্ষমতা কমে আসে এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। এটি প্রধানত শীতকালে দেখা দেয়। প্রতিকার: প্রতিটি কাঠা জলে ৮০০ গ্রাম চুন এবং ৮০ গ্রাম কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে দু’বার ছিটিয়ে দিতে হবে। প্রথমবার দেওয়ার ৭ দিন পরে দ্বিতীয়বার দিলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
উপরোক্ত তথ্যাদি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ থেকে সংগৃহীত।