Other

কোন কোন মাছে এলার্জি আছে

মাছ বাংলাদেশের খাদ্য সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু অনেকের কাছে এই পুষ্টিকর খাবারটি স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। মাছ এলার্জি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা অনেক মানুষকে প্রভাবিত করে। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কোন কোন মাছে এলার্জি হয়, এর কারণ কী, কীভাবে এটি শনাক্ত করা যায় এবং কীভাবে এই সমস্যা মোকাবেলা করা যায়।

মাছ এলার্জি কী?

মাছ এলার্জি হল একটি অস্বাভাবিক প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়া যা তখনই ঘটে যখন কোনও ব্যক্তি মাছ খায় বা মাছের সংস্পর্শে আসে। এই এলার্জি সাধারণত মাছের প্রোটিনের প্রতি শরীরের অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার কারণে হয়। যদিও যে কোনও বয়সে মাছ এলার্জি দেখা দিতে পারে, তবে এটি প্রায়শই শৈশবে শুরু হয় এবং সারা জীবন ধরে থাকতে পারে।

মাছ এলার্জির প্রচলন

বাংলাদেশে মাছ এলার্জির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন, তবে বিশ্বব্যাপী গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় 2% থেকে 3% প্রাপ্তবয়স্ক এবং 0.2% থেকে 2.4% শিশু মাছ এলার্জিতে ভুগছে। এই সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, যা এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

কোন কোন মাছে এলার্জি বেশি হয়?

সব মাছেই এলার্জি হতে পারে, কিন্তু কিছু মাছ অন্যদের তুলনায় বেশি এলার্জি সৃষ্টি করে। নিচে কয়েকটি সাধারণ এলার্জি সৃষ্টিকারী মাছের তালিকা দেওয়া হল:

  1. সালমন: এই মাছটি উচ্চ মাত্রায় পার্ভালবুমিন নামক একটি প্রোটিন ধারণ করে, যা এলার্জির প্রধান কারণ।
  2. টুনা: ক্যানড টুনা সহ সব ধরনের টুনা মাছ এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
  3. কড: এই সাদা মাংসের মাছটি অনেকের জন্য এলার্জির কারণ হতে পারে।
  4. হ্যাডক: কডের মতোই, হ্যাডকও একটি সাধারণ এলার্জি সৃষ্টিকারী মাছ।
  5. ম্যাকেরেল: এই তৈলাক্ত মাছটি অনেকের মধ্যে তীব্র এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  6. ট্রাউট: সালমনের মতো, ট্রাউটও উচ্চ মাত্রায় এলার্জি সৃষ্টিকারী প্রোটিন ধারণ করে।
  7. বাস: এই মিষ্টি পানির মাছটিও অনেকের মধ্যে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
  8. ফ্লাউন্ডার: এই চ্যাপ্টা মাছটি কিছু লোকের মধ্যে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  9. হালিবাট: এই বড় ফ্ল্যাটফিশটিও এলার্জির কারণ হতে পারে।
  10. সার্ডিন: ছোট হলেও, সার্ডিন গুরুতর এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়াও, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কিছু স্থানীয় মাছও এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে:

  1. ইলিশ: বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হলেও, এটি কিছু লোকের মধ্যে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
  2. রুই: এই মিষ্টি পানির মাছটি অনেকের প্রিয় হলেও এলার্জির কারণ হতে পারে।
  3. কাতলা: রুইয়ের মতো, কাতলাও কিছু লোকের মধ্যে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  4. পাঙ্গাস: এই চাষকৃত মাছটি কিছু ক্ষেত্রে এলার্জির কারণ হতে পারে।
  5. শিং: এই ছোট মাছটিও কিছু লোকের মধ্যে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।

মাছ এলার্জির কারণ

মাছ এলার্জির প্রধান কারণ হল মাছের প্রোটিনের প্রতি শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। নিম্নলিখিত কারণগুলি মাছ এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে:

  1. জেনেটিক প্রবণতা: যদি পরিবারে কারও মাছ এলার্জি থাকে, তাহলে অন্যদের মধ্যেও এই এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  2. পার্ভালবুমিন: এই প্রোটিনটি প্রায় সব মাছেই পাওয়া যায় এবং এটি মাছ এলার্জির প্রধান কারণ।
  3. ক্রস-রিয়্যাকটিভিটি: কিছু লোক যারা শেলফিশে এলার্জি আছে, তারা মাছেও এলার্জি অনুভব করতে পারে।
  4. প্রক্রিয়াজাতকরণ: মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক পদার্থ এলার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  5. হিস্টামিন বিষক্রিয়া: কিছু মাছে (যেমন টুনা, ম্যাকেরেল) উচ্চ মাত্রায় হিস্টামিন থাকতে পারে, যা এলার্জির মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।

মাছ এলার্জির লক্ষণ

মাছ এলার্জির লক্ষণগুলি খুবই বিভিন্ন হতে পারে এবং হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলি হল:

  1. ত্বকের প্রতিক্রিয়া:
    • চুলকানি
    • লাল হয়ে যাওয়া
    • ফুসকুড়ি
    • এক্জিমা
  2. পাচনতন্ত্রের সমস্যা:
    • বমি বমি ভাব
    • বমি
    • পেট ব্যথা
    • ডায়রিয়া
  3. শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা:
    • হাঁপানি
    • শ্বাসকষ্ট
    • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া
    • হাঁচি
  4. চোখের লক্ষণ:
    • লাল হয়ে যাওয়া
    • চুলকানি
    • পানি পড়া
  5. অন্যান্য:
    • মাথা ব্যথা
    • চক্কর লাগা
    • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

সবচেয়ে গুরুতর প্রতিক্রিয়া হল অ্যানাফাইল্যাক্সিস, যা জীবনের জন্য হুমকি হতে পারে। এর লক্ষণগুলি হল:

  • শ্বাসকষ্ট
  • গলা ফুলে যাওয়া
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

মাছ এলার্জি নির্ণয়

মাছ এলার্জি নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে:

  1. রক্ত পরীক্ষা: এই পরীক্ষায় রক্তে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়।
  2. ত্বক প্রিক টেস্ট: ত্বকের উপর মাছের এক্সট্রাক্ট প্রয়োগ করে প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়।
  3. প্যাচ টেস্ট: ত্বকের উপর মাছের এক্সট্রাক্ট লাগিয়ে কয়েক ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
  4. খাদ্য চ্যালেঞ্জ টেস্ট: চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে মাছ খাইয়ে প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়।
  5. এলিমিনেশন ডায়েট: কিছুদিনের জন্য সম্পূর্ণভাবে মাছ বাদ দিয়ে লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা হয়।

মাছ এলার্জি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

মাছ এলার্জি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

  1. সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা:
    • মাছ ও মাছজাত খাবার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন।
    • রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন, কারণ ক্রস-কন্টামিনেশনের ঝুঁকি থাকতে পারে।
    • খাবারের লেবেল সাবধানে পড়ুন, কারণ অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারে মাছের উপাদান থাকতে পারে।
  2. বিকল্প খাবার:
    • প্রোটিনের জন্য চিকেন, গরুর মাংস, ডাল, ডিম ইত্যাদি খান।
    • ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের জন্য বাদাম, বীজ, সয়াবিন তেল ব্যবহার করুন।
  3. জরুরি ওষুধ:
    • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এপিনেফ্রিন অটো-ইনজেক্টর সঙ্গে রাখুন।
    • অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট সঙ্গে রাখুন হালকা প্রতিক্রিয়ার জন্য।
  4. সচেতনতা:
    • পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের আপনার এলার্জি সম্পর্কে অবহিত করুন।
    • মেডিকেল আইডি ব্রেসলেট পরুন যাতে আপনার এলার্জি সম্পর্কে তথ্য থাকে।
  5. নিয়মিত পরীক্ষা:
    • নিয়মিত অ্যালার্জিস্ট বা ইমিউনোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
    • নতুন কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  6. ইমিউনোথেরাপি:
    • কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসকের পরামর্শে ইমিউনোথেরাপি নেওয়া যেতে পারে।
    • এই চিকিৎসায় ধীরে ধীরে শরীরকে মাছের প্রোটিনের প্রতি সহনশীল করে তোলা হয়।
  7. শিক্ষা ও গবেষণা:
    • মাছ এলার্জি সম্পর্কে নিয়মিত নতুন তথ্য জানুন।
    • গবেষণা ও নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত থাকুন।

মাছ এলার্জি ও জীবনযাত্রা

মাছ এলার্জি থাকলেও স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সম্ভব। নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হল:

  1. পুষ্টি নিশ্চিত করা:
    • মাছের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।
    • ভিটামিন ডি ও ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  2. সামাজিক খাওয়া-দাওয়া:
    • রেস্তোরাঁয় যাওয়ার আগে মেনু দেখে নিন।
    • সার্ভারকে আপনার এলার্জি সম্পর্কে অবহিত করুন।
    • প্রয়োজনে নিজের খাবার সঙ্গে নিয়ে যান।
  3. ভ্রমণ:
    • ভ্রমণের আগে গন্তব্যের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জেনে নিন।
    • হোটেল বা এয়ারলাইনকে আগে থেকে আপনার এলার্জি সম্পর্কে জানান।
    • জরুরি ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
  4. শিশুদের ক্ষেত্রে:
    • শিশুর স্কুল ও শিক্ষকদের এলার্জি সম্পর্কে অবহিত করুন।
    • বাচ্চাকে নিজের এলার্জি সম্পর্কে সচেতন করে তুলুন।
    • স্কুলে জরুরি ওষুধ রাখার ব্যবস্থা করুন।
  5. মানসিক স্বাস্থ্য:
    • এলার্জি নিয়ে উদ্বিগ্ন হলে মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিন।
    • সমান অবস্থায় থাকা অন্যদের সাথে যোগাযোগ রাখুন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাছ এলার্জি

বাংলাদেশে মাছ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার, তাই এখানে মাছ এলার্জি থাকা ব্যক্তিদের জন্য কিছু অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  1. সামাজিক চাপ:
    • অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানে মাছ পরিবেশন করা হয়, যা এলার্জি থাকা ব্যক্তিদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
    • পরিবার ও বন্ধুদের বোঝানো যে মাছ না খাওয়া আপনার পছন্দ নয়, বরং স্বাস্থ্যগত বাধ্যবাধকতা।
  2. রেস্তোরাঁ ও স্ট্রিট ফুড:
    • অনেক বাংলাদেশী খাবারে মাছের উপাদান থাকে, যা সহজে বোঝা যায় না।
    • রেস্তোরাঁয় খাওয়ার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
  3. পুষ্টি চ্যালেঞ্জ:
    • মাছ বাংলাদেশে প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের একটি প্রধান উৎস।
    • মাছ ছাড়া সুষম খাদ্যতালিকা তৈরি করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
  4. সচেতনতার অভাব:
    • অনেক ক্ষেত্রে, মাছ এলার্জি সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতার অভাব রয়েছে।
    • এটি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  5. চিকিৎসা সুবিধা:
    • গ্রামাঞ্চলে অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে।
    • জরুরি চিকিৎসা সেবা পেতে সমস্যা হতে পারে।

গবেষণা ও ভবিষ্যৎ চিকিৎসা

মাছ এলার্জি নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা চলছে। কিছু প্রতিশ্রুতিশীল গবেষণা ও চিকিৎসা পদ্ধতি হল:

  1. ওরাল ইমিউনোথেরাপি:
    • এই পদ্ধতিতে রোগীকে ক্রমশ বাড়তি মাত্রায় মাছের প্রোটিন খাওয়ানো হয়।
    • এর মাধ্যমে শরীরকে ধীরে ধীরে মাছের প্রতি সহনশীল করে তোলা হয়।
  2. এপিকিউটেনিয়াস ইমিউনোথেরাপি:
    • এই পদ্ধতিতে ত্বকের মাধ্যমে মাছের প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
    • এটি ওরাল ইমিউনোথেরাপির চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
  3. অ্যান্টি-আইজিই থেরাপি:
    • এই চিকিৎসায় শরীরের আইজিই অ্যান্টিবডি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
    • এটি অন্যান্য এলার্জির ক্ষেত্রে সফল হয়েছে এবং মাছ এলার্জির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হচ্ছে।
  4. হাইপোঅ্যালারজেনিক মাছ:
    • গবেষকরা এমন মাছ তৈরির চেষ্টা করছেন যাতে কম এলার্জি সৃষ্টিকারী প্রোটিন থাকবে।
    • এটি জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে করা হচ্ছে।
  5. নানোপার্টিকল ইমিউনোথেরাপি:
    • এই পদ্ধতিতে নানোপার্টিকলের মাধ্যমে মাছের প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
    • এটি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQ)

প্রশ্ন: মাছ এলার্জি কি জীবনভর থাকে?

উত্তর: হ্যাঁ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাছ এলার্জি জীবনভর থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে এর তীব্রতা কমতে পারে।

প্রশ্ন: মাছ এলার্জি থাকলে কি সব ধরনের মাছ খাওয়া যাবে না?

উত্তর: সাধারণত, যদি কোনও একটি মাছে এলার্জি থাকে, তবে অন্যান্য মাছেও এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও মাছ খাওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন: মাছের তেলের ক্যাপসুলে কি এলার্জি হতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, মাছের তেলের ক্যাপসুলে এলার্জি হতে পারে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাছের তেল শোধন প্রক্রিয়ায় এলার্জি সৃষ্টিকারী প্রোটিন দূর হয়ে যায়, তবুও কিছু ক্ষেত্রে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। মাছে এলার্জি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাছের তেলের ক্যাপসুল খাওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন: শুধু মাছের গন্ধে কি এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে শুধু মাছের গন্ধেও এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এটি বিশেষ করে মাছ রান্নার সময় বা মাছ বাজারে যাওয়ার সময় ঘটতে পারে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সাধারণত শ্বাসকষ্ট বা নাকের সমস্যার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

প্রশ্ন: মাছে এলার্জি থাকলে কি শেলফিশেও এলার্জি হবে?

উত্তর: মাছে এলার্জি থাকলে শেলফিশে এলার্জি হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। মাছ ও শেলফিশের মধ্যে এলার্জি সৃষ্টিকারী প্রোটিন আলাদা। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ক্রস-রিয়্যাকটিভিটি দেখা যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন: মাছ এলার্জি কি প্রতিরোধ করা যায়?

উত্তর: বর্তমানে মাছ এলার্জি সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করার কোনও নিশ্চিত উপায় নেই। তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে যথাসময়ে (সাধারণত 4-6 মাস বয়সে) বিভিন্ন খাবার পরিচয় করানোর মাধ্যমে এলার্জির ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে মায়েরা স্বাভাবিকভাবে মাছ খেলে তা শিশুর এলার্জি প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

প্রশ্ন: মাছ এলার্জি থাকলে কি ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হবে?

উত্তর: মাছ ভিটামিন ডি-এর একটি ভালো উৎস, তাই মাছ এলার্জি থাকলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে, সূর্যের আলোতে থাকা, ডিম, দুধ, ফোর্টিফাইড খাদ্য এবং সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ভিটামিন ডি লেভেল পরীক্ষা করা উচিত।

প্রশ্ন: মাছ এলার্জি থাকলে কি রেস্তোরাঁয় খাওয়া নিরাপদ?

উত্তর: মাছ এলার্জি থাকলে রেস্তোরাঁয় খাওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে সম্পূর্ণ অসম্ভব নয়। রেস্তোরাঁয় যাওয়ার আগে মেনু দেখে নিন, স্টাফদের আপনার এলার্জি সম্পর্কে অবহিত করুন, এবং ক্রস-কন্টামিনেশন এড়াতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার অনুরোধ করুন। সন্দেহজনক খাবার এড়িয়ে চলুন এবং প্রয়োজনে নিজের খাবার সঙ্গে নিয়ে যান।

প্রশ্ন: মাছ এলার্জি কি বংশগত?

উত্তর: মাছ এলার্জির একটি বংশগত উপাদান থাকতে পারে। যদি পরিবারের কারও মাছ এলার্জি থাকে, তাহলে অন্যদের মধ্যেও এই এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে, এটি নিশ্চিত নয় যে পরিবারের সবার মধ্যেই এই এলার্জি দেখা দেবে।

প্রশ্ন: মাছ এলার্জি থাকলে কি সব সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলতে হবে?

উত্তর: মাছ এলার্জি থাকলে সব সামুদ্রিক খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি নয়। উদাহরণস্বরূপ, সামুদ্রিক শৈবাল (সি-উইড) খাওয়া যেতে পারে। তবে, ক্রস-কন্টামিনেশনের ঝুঁকি থাকায় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শে প্রতিটি সামুদ্রিক খাবারের জন্য আলাদা আলাদা পরীক্ষা করা যেতে পারে।

উপসংহার

মাছ এলার্জি একটি জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে মাছ দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, সঠিক জ্ঞান, সতর্কতা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার মাধ্যমে এই এলার্জি নিয়েও স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সম্ভব।

মনে রাখবেন, প্রতিটি ব্যক্তির এলার্জির ধরন ও তীব্রতা আলাদা হতে পারে। তাই নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নতুন গবেষণা ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত থাকুন, কারণ ভবিষ্যতে এই এলার্জির আরও কার্যকর চিকিৎসা আবিষ্কৃত হতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button