সান্ডা খাওয়া কি জায়েজ
সান্ডা বা ‘দব’ (ضب) নিয়ে মুসলিম সমাজে প্রায়ই প্রশ্ন উঠে থাকে – এটি খাওয়া জায়েজ কি না। এই প্রাণীটি আরব মরুভূমির একটি বিশেষ প্রজাতির সরীসৃপ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx বা ইউরোমাস্টিক্স। এটিকে কাঁটাওয়ালা টিকটিকিও বলা হয়।
সান্ডা বা দব সম্পর্কে মৌলিক তথ্য
বৈশিষ্ট্য ও জীবনযাপন
- দৈর্ঘ্য: প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় ৮৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত
- বংশবিস্তার: ডিমের মাধ্যমে
- বাসস্থান: মরুভূমি অঞ্চল
- শারীরিক গঠন: পুরু ও অমসৃণ চামড়া, চওড়া ও গিটযুক্ত লেজ
ইসলামী দৃষ্টিকোণে সান্ডা খাওয়ার বিধান
হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ
প্রথম হাদিস
হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখ আছে যে, রাসূল (স) এর কাছে একটি দব হাদিয়া হিসেবে পাঠানো হলে তিনি তা খাননি।
দ্বিতীয় হাদিস
ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত:
“রাসূলুল্লাহ (স) কে দব খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে তা খাই না তবে তা খাওয়া হারামও বলি না।'”
আলেমদের মতামত
যারা হালাল বলেছেন
- ইমাম শাফিঈ
- ইমাম মালিক
- ইমাম আহমদ
- অধিকাংশ হাদিস পণ্ডিত
তাদের দলিল:
- রাসূল (স) এর দস্তরখানে দব খাওয়া হয়েছে
- তিনি নিষেধ করেননি
- সাহাবীগণ এটি খেয়েছেন
যারা মাকরূহ বলেছেন
- কিছু হানাফী আলেম
- আলী (রা) থেকে একটি বর্ণনা
সান্ডা ও গুইসাপের পার্থক্য
মৌলিক পার্থক্য
- বাসস্থান
- সান্ডা: শুধুমাত্র মরুভূমি অঞ্চলে
- গুইসাপ: উভচর প্রাণী, বিভিন্ন পরিবেশে বাস করে
- খাদ্যাভ্যাস
- সান্ডা: উদ্ভিদভোজী
- গুইসাপ: মাংসাশী এবং বিষাক্ত
- শারীরিক গঠন
- সান্ডা: পুরু চামড়া, বিশেষ ধরনের লেজ
- গুইসাপ: ভিন্ন ধরনের চামড়া ও শারীরিক গঠন
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
প্রামাণ্য হাদিস ও আলেমদের মতামতের আলোকে বলা যায়:
- সান্ডা খাওয়া মূলত হালাল
- রাসূল (স) নিজে না খেলেও তা হারাম ঘোষণা করেননি
- সাহাবীগণ এটি খেয়েছেন
- অধিকাংশ আলেম এটি হালাল বলেছেন
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- বাংলাদেশে যে গুইসাপ পাওয়া যায় তা হারাম
- শুধুমাত্র মরুভূমির সান্ডা বা দব সম্পর্কে এই হালাল হওয়ার বিধান প্রযোজ্য
সতর্কতা
যেহেতু এই প্রাণীটি আমাদের দেশে পাওয়া যায় না, তাই কোনো সরীসৃপ প্রাণী দেখলেই তাকে সান্ডা মনে করে খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। শুধুমাত্র প্রকৃত মরুভূমির সান্ডা বা দব সম্পর্কেই এই বিধান প্রযোজ্য।
প্রশ্নাবলী (FAQs)
প্রশ্ন ১: সান্ডা খাওয়া কি হালাল?
উত্তর: অধিকাংশ আলেমের মতে সান্ডা খাওয়া হালাল। রাসূল (সা.) নিজে না খেলেও তিনি এটি হারাম বলেননি এবং অন্যদের খেতে নিষেধও করেননি।
প্রশ্ন ২: রাসূল (সা.) কেন সান্ডা খেতেন না?
উত্তর: এটি তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয় ছিল। তিনি নিজের জন্মভূমি মক্কায় এটি খাওয়ার অভ্যাস ছিল না বলে খেতেন না।
প্রশ্ন ৩: বাংলাদেশে পাওয়া গুইসাপ কি সান্ডা?
উত্তর: না। বাংলাদেশে পাওয়া গুইসাপ সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী। এটি খাওয়া হারাম।
প্রশ্ন ৪: সান্ডা কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: সান্ডা মূলত আরব মরুভূমি ও আশপাশের অঞ্চলে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ৫: সান্ডা কি বিষাক্ত?
উত্তর: না, সান্ডা বিষাক্ত নয়। এটি উদ্ভিদভোজী প্রাণী।
প্রশ্ন ৬: সাহাবীগণ কি সান্ডা খেতেন?
উত্তর: হ্যাঁ, অনেক সাহাবী সান্ডা খেতেন। খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) রাসূল (সা.)-এর সামনে সান্ডা খেয়েছেন।
প্রশ্ন ৭: সান্ডা খাওয়ার ক্ষেত্রে কি কোন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?
উত্তর: হ্যাঁ, নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে:
- প্রকৃত মরুভূমির সান্ডা কিনা
- হালাল পদ্ধতিতে যবাই করা হয়েছে কিনা
- স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুত করা হয়েছে কিনা
প্রশ্ন ৮: সান্ডার পুষ্টিগুণ কি?
উত্তর: সান্ডার মাংসে রয়েছে:
- উচ্চমাত্রার প্রোটিন
- খনিজ লবণ
- ভিটামিন
- স্বল্প চর্বি
প্রশ্ন ৯: কোন মাযহাবে সান্ডা মাকরূহ?
উত্তর: কিছু হানাফী আলেম সান্ডা খাওয়া মাকরূহে তানযিহি বলেছেন। তবে অধিকাংশ হানাফী আলেম এটি হালাল বলেছেন।
প্রশ্ন ১০: সান্ডা কিভাবে চিনব?
উত্তর: সান্ডার বৈশিষ্ট্যগুলো হল:
- পুরু, খসখসে চামড়া
- কাঁটাযুক্ত লেজ
- মরুভূমির প্রাণী
- উদ্ভিদভোজী
উপসংহার
ইসলামী শরীয়তে সান্ডা বা দব খাওয়া হালাল হলেও এটি ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয়। রাসূল (স) নিজে এটি পছন্দ না করলেও অন্যদের খাওয়া নিষেধ করেননি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের দেশের সাধারণ গুইসাপকে সান্ডা মনে করে খাওয়া থেকে বিরত থাকা, কারণ এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এবং এর মাংস খাওয়া হারাম।